কুলধারা, Kuldhara

শুধু সাহিত্যের পাতায় নয়। বাস্তবেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু ‘ক্ষুধিত পাষাণ’। সে রকমই একটি কুলধারা । সোনার কেল্লার শহর থেকে ১৮ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে এই স্থান অতীতে ছিল বর্ধিষ্ণু গ্রাম। কোনও এক রহস্যজনক কারণে রাতারাতি তা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। সারি সারি ঘর-রাস্তা-মন্দির নিয়ে একা একা পড়ে আছে অতীতের এই জনপদ। শুধু সেখানে থাকার কেউ নেই।থর মরুভূমির কোলে এই গ্রামের পত্তন হয়েছিল ত্রয়োদশ শতকে। যোধপুরের পালিওয়াল সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণরা এখানে বসত গড়েছিলেন। তাঁরা কৃষি ও ব্যবসা দু’দিকেই দক্ষ ছিলেন। পালি থেকে এসেছিলেন বলে তাঁদের পালিওয়াল ব্রাহ্মণ বলা হত।১৮৯৯ সালে রচিত বই ‘তারিখ-ই-জয়সলমের’-এ উল্লেখ আছে কুলধারার। সেখানে বলা হয়েছে, কড়হান নামে এক পালিওয়াল ব্রাহ্মণ এখানে প্রথম বসত তৈরি করেছিলেন। গ্রামের ধ্বংসস্তূপে পাওয়া গিয়েছে তিনটি সমাধিক্ষেত্র। পাশাপাশি, ৬০০-র বেশি বাড়ির ভগ্নাবশেষ সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে।কুলধারা-সহ স্থানীয় ৮৩টি গ্রামে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। জনশ্রুতি, ১৮২৫ সালে রাখিপূর্ণিমার রাতে জনশূন্য হয়ে পড়ে সেগুলো। রাতারাতি কর্পূরের মতো মিলিয়ে যান প্রায় ১৫০০ গ্রামবাসী। তবে বাকি গ্রামগুলোর নাম চাপা পড়ে গিয়ে মূলস্রোতে রয়ে গিয়েছে শুধু ‘কুলধারা’ নামটিই।কেন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে কুলধারা? নেপথ্যে আছে বহু জনশ্রুতি ও কিংবদন্তি। সে রকমই এক কাহিনি বলে, স্থানীয় সামন্ত শাসক সালিম সিংহ নাকি গ্রামের এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন। তিনি সৈন্য পাঠিয়ে হরণ করতে চেয়েছিলেন ওই কন্যাকে। কিন্তু গ্রামবাসীরা এক রাত সময় চেয়ে নেন। বলেন, পরের দিন এলে তাঁদের হাতে মেয়েকে তুলে দেওয়া হবে।গ্রামবাসীদের ফন্দি বুঝতে পারেননি সামন্ত। তিনি অপেক্ষা করতে রাজি হয়ে যান। সেই সুযোগে এক রাতের মধ্যে পালিয়ে যান গ্রামবাসীরা। পরের দিন সকালে খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁদের একজনকেও। সামন্তের কুনজর থেকে রক্ষা পান গ্রামের মেয়ে।কিন্তু গ্রামবাসীরা কি ফিরে যান আবার যোধপুরের পালিতে? নাকি নতুন বসতি গড়েন অন্য কোথাও? ইতিহাস সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরব। কার্যত কর্পূরের মতো উবে যান তাঁরা।প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা কুলধারা ভৌতিক গ্রামে পরিণত হয়। দিল্লির প্যারানর্মাল সোসাইটি র দাবি, রাতভর এখানে অলৌলিক ঘটনা ঘটে চলে। আচমকাই নাকি কমে যায় তাপমাত্রা। রাতের অন্ধকার চিরে শোনা যায় আর্ত চিৎকার। বিশ্বাসীদের ধারণা, কুলধারার অতীত-বাসিন্দাদের আত্মা এখনও এই গ্রামের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেনি।এ তো গেল জনশ্রুতি। ঐতিহাসিক তথ্য কী বলছে? অনেক গবেষকের ধারণা, যুদ্ধের প্রয়োজনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল গ্রামবাসীদের। তবে ঐতিহাসিক ও গবেষকদের বড় অংশের বিশ্বাস, খরার কারণেই জনহীন হয়ে পড়ে কুলধারা ও তার সংলগ্ন অন্যান্য গ্রাম।কুলধারার জলের উৎস ছিল ক্ষীণ কাঁকনি নদী আর গ্রামের কুয়ো। কিন্তু ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শুকিয়ে আসতে থাকে গ্রামের কুয়োগুলি। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে জল ছিল শুধু গ্রামের ধাপ-কুয়ো এবং আর দু’টি কুয়োতে। জলাভাবে কমে যায় কৃষিফলন। কিন্তু জয়সলমেরের রাজপুত শাসকদের রাজস্বের হার কমেনি এক বিন্দুও। তা মেটাতে নাভিশ্বাস উঠে যায় গ্রামবাসীদের।ধীরে ধীরেই হোক, বা রাতারাতি, জনশূন্য হয়ে পড়ে কুলধারা গ্রাম। আর কেউ কোনওদিন ফিরে আসেননি এই গ্রামে। এখন আসেন পর্যটকরা। ইদানীং রাজস্থান পর্যটনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ কুলধারা। সোনার কেল্লার পাশাপাশি পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিচ্ছে ‘ভৌতিক’ কুলধারাও।

2356 232

Suggested Podcasts

Fearne Cotton

Tamil Yeoja

Corinne Dobbas

Candyce Mehler, DO & Taylor Millar, MD

Cultural Compulsive Disorder

Hawkeyes Podcast

Midnight Disease Productions

WRESTLER GAMING